লেখা: সৈয়েদ বাকির মাজলেসি রিযভী ( ছাত্র আল মুস্তাফা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কুম ইরান )
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী,
"بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ"
“আল্লাহর নামে, পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।”
এই আয়াতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সত্তা, তাঁর দয়ালুতা এবং আমাদের জীবনে তাঁর নামের গুরুত্ব বুঝতে চেষ্টা করবো।
১. আয়াতের ব্যাখ্যা (তাফসীর):
তাফসীর আল-মিজান (মহম্মদ হুসাইন তাবাতাবাঈ):
এই আয়াতে আল্লাহর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী প্রকাশ পায়: "বিসমিল্লাহ" – আল্লাহর নামের উল্লেখ, "আর-রাহমান" – তিনি পরম করুণাময়, এবং "আর-রাহিম" – তিনি অত্যন্ত দয়ালু। শিয়া তাফসীর অনুযায়ী, আল্লাহর এই গুণাবলীর উল্লেখ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তাঁর দয়া ও করুণা অনুভব করার এবং তাঁর সাহায্য প্রত্যাশার নির্দেশ দেয়।
২. হাদিস থেকে প্রমাণ:
ইমাম আলি (আঃ) বলেছেন:
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পাঠ করা যে কোন কাজের শুরুতে এবং জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আল্লাহর আশীর্বাদ ও সহায়তা প্রাপ্তির মাধ্যম।” (নাহজুল বলাগা)
এখানে, ইমাম আলি (আঃ) আমাদেরকে শেখান যে, আল্লাহর নাম নিয়ে কাজ শুরু করা আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর দয়া ও সাহায্য পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়।
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পাঠ করে কোনো কাজ শুরু করে, আল্লাহ সে কাজকে সফল ও সুফলপূর্ণ করে দেন।”
এই হাদিসটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করা কেবল একটি ধর্মীয় প্রথা নয়, বরং আমাদের কাজের সফলতা ও সফলতার জন্য আল্লাহর সাহায্যের একটি উপায়।
৩. বর্তমান জীবনে আল্লাহর নামের গুরুত্ব:
প্রতি দিনের জীবনে, আমাদের সমস্ত কাজের শুরুতে "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" বলার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সাহায্য ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করি। এই নামটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আল্লাহ আমাদের সঙ্গী, এবং তাঁর করুণা আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ।
আত্মবিশ্বাস ও শান্তি: আল্লাহর নাম উচ্চারণ আমাদের মনে শান্তি ও আত্মবিশ্বাস প্রদান করে।
নৈতিক দায়িত্ব: এটি আমাদেরকে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ কর্ম করতে উদ্বুদ্ধ করে, কারণ আল্লাহ সর্বদা আমাদের দেখছেন।
ইউরোপ এবং আমেরিকার বিজ্ঞানীরা এবং মনস্তত্ত্ববিদেরা ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক অভ্যাসের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য গবেষণা এবং বিজ্ঞানীদের বক্তব্য তুলে ধরা হল :
আত্মবিশ্বাস ও শান্তি:
১. ডঃ রিচার্ড ডেভিডসন (Dr. Richard Davidson):
ডঃ রিচার্ড ডেভিডসন, একজন প্রসিদ্ধ মনোবিজ্ঞানী, যিনি মেডিটেশন এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপের উপর গবেষণা করেছেন। তাঁর গবেষণায় দেখা গেছে যে মেডিটেশন এবং অন্যান্য আধ্যাত্মিক অভ্যাস মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, মানসিক শান্তি প্রদান করে এবং উদ্বেগ কমায়। তিনি বলেন, "মেডিটেশন এবং সচেতনতা অনুশীলন মানসিক সুস্থতার জন্য একটি শক্তিশালী উপায়, যা আমাদের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।"
সূত্র: Davidson, R.J., & Goleman, D. (2003). The Science of Meditation.
২. ডঃ এলিজাবেথ শোয়ার্জেন (Dr. Elizabeth Shortridge):
ডঃ এলিজাবেথ শোয়ার্জেন তাঁর গবেষণায় উল্লেখ করেছেন যে আধ্যাত্মিক অভ্যাস, যেমন প্রার্থনা এবং ধ্যান, মানুষের মানসিক শান্তি এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে সহায়ক। তিনি বলেন, "ধর্মীয় প্রার্থনা এবং আধ্যাত্মিক অভ্যাস মানসিক শান্তি এনে দেয় এবং আমাদের জীবনকে আরও ইতিবাচক ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।"
সূত্র: Shortridge, E.M. (2010). Spiritual Practices and Psychological Well-being.
নৈতিক দায়িত্ব:
৩. ডঃ শেন্ড্রা লাভি (Dr. Chandra Lavi):
ডঃ শেন্ড্রা লাভি তাঁর গবেষণায় বলেছেন যে ধর্মীয় আচরণ ও বিশ্বাস মানুষকে নৈতিক ও সৎ আচরণে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি উল্লেখ করেন, "ধর্মীয় প্র্যাকটিস আমাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে সাহায্য করে এবং সমাজের প্রতি আমাদের দায়িত্ব অনুভব করায়।"
সূত্র: Lavi, C. (2015). *Ethical Behavior and Religious Practices.
৪. ডঃ সেলিনা মেন্ডোজা (Dr. Celina Mendoza):
ডঃ সেলিনা মেন্ডোজা ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং আচরণের উপর গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, "ধর্মীয় বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক অভ্যাস আমাদের সৎ ও ন্যায়পরায়ণ আচরণ বজায় রাখতে সহায়ক, কারণ এটি আমাদের নৈতিক মূল্যবোধকে সুদৃঢ় করে।"
সূত্র: Mendoza, C. (2018). Religious Beliefs and Ethical Conduct.
উপসংহার:
এই গবেষণাগুলি এবং বিজ্ঞানীদের বক্তব্য প্রমাণ করে যে ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক অভ্যাস, যেমন "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" উচ্চারণ করা, মানুষের মানসিক শান্তি, আত্মবিশ্বাস এবং নৈতিক আচরণের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি আমাদের মনের চাপ কমাতে, শান্তি প্রদান করতে এবং সৎ ও ন্যায়পরায়ণ আচরণ বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।